
ঢাকা, মার্চ ১৯৭১। শহরের রাস্তায় তখন রাতের অন্ধকার। কিন্তু সেই অন্ধকারকে চিরে চিরে আসছিল গুলির শব্দ, মর্টারের বিস্ফোরণ আর মানুষের আর্তচিৎকার। ২৫ মার্চের রাতেই পাকিস্তানি সেনারা চালায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’—যার উদ্দেশ্য ছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের আন্দোলন চিরতরে স্তব্ধ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসকারী রোকেয়া হলের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্মৃতিচারণ করে বলেন—
“হঠাৎ দেখি হলের বাইরে আলোর ঝলকানি, সঙ্গে বিকট শব্দ। আমাদের কক্ষের জানালায় গুলি এসে লাগে। একসময় জানালা দিয়ে দেখি, করিডরে সহপাঠীরা পড়ে আছে… নিঃশ্বাস নেই কারও।”
পিলখানা, আজিমপুর, পল্টন, পুরান ঢাকা—সবখানেই চলছিল নির্বিচার হত্যা ও অগ্নিসংযোগ। সেনারা ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষ টেনে বের করছিল, কেউ গুলি খেয়ে পড়ছে, কেউ আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে।
পুরান ঢাকার এক বৃদ্ধ তখনকার দৃশ্য মনে করে বলেন—
“রাস্তায় যতদূর চোখ যায়, লাশ আর লাশ। চারপাশে বারুদের গন্ধ, আগুনে জ্বলছিল ঘরবাড়ি। শহরটা যেন কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল।”
রাত পেরিয়ে যখন ভোর হলো, ঢাকার আকাশে ছিল ধোঁয়ার কালো মেঘ। রেডিও পাকিস্তানের হাতে, সংবাদপত্র সেনাদের সেন্সরে আটকে। আর মানুষ? তারা তখনো ঘরে আটকা, মনে শুধু প্রশ্ন—”এ শহর কি আর কখনো আগের মতো হবে?”