
সাপে কামড়ে মৃত্যুর ঘটনাকে স্বাস্থ্যখাতের ‘নীরব সংকট’ উল্লেখ করে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সব উপজেলা পর্যায়ে সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নুরুন্নবী করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (১৮ আগস্ট) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আদালত একই সঙ্গে রুল জারি করে বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে।
গত ১৭ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত “সাপের কামড়ে মৃত্যু, স্বাস্থ্য খাতে এক নীরব সংকট” শীর্ষক প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট করা হয়। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৯৬ হাজার ৫০০ জন বিষধর সাপে কামড়ান। বছরে ৭ হাজার ৫০০-এর বেশি মানুষ মারা যান। প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের মৃত্যু ঘটে।
🐍 কেন বাড়ছে সাপের কামড়?
বনভূমি ও কৃষিজমি কমে যাওয়ায় সাপের আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। মানুষ-সাপের সংঘাত বেড়েছে। সচেতনতার অভাব ও চিকিৎসকের কাছে দেরিতে যাওয়া। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম না থাকা বা ব্যবহার না করা।
🐍 বাংলাদেশে বিষধর সাপের প্রজাতি>
বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ, এর মধ্যে ৫% বিষধর। প্রধানগুলো হলো: রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া), কিং কোবরা (শঙ্খচূড়), নায়া নায়া (গোখরা), কেউটে, ক্রেইট (শঙ্খিনী), নায়া কাউচিয়া, এর মধ্যে রাসেলস ভাইপার সবচেয়ে মারাত্মক। বর্তমানে অন্তত ২৭ জেলায় এ সাপের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
💉 অ্যান্টিভেনম সরবরাহ ও সীমাবদ্ধতা>
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী—বছরে ৭০ হাজার ডোজ অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন হলেও, বাস্তবে ব্যবহৃত হয় মাত্র ২৫ হাজার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার কিনেছে ১০ হাজার ভায়াল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে আরও ১০ হাজার ভায়াল। বর্তমানে মজুত রয়েছে মাত্র ৬৫০ ভায়াল। ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনমগুলো দক্ষিণ ভারতের চার প্রজাতির সাপ থেকে তৈরি, যা সব সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়।
🩺 বিশেষজ্ঞ মতামত
ডা. এম এ ফয়েজ (সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর):
“অ্যান্টিভেনম শত বছরের পুরনো প্রযুক্তির। ফলে প্রয়োগের পরও ২০-২২% রোগী মারা যান।”
ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন (লাইন ডিরেক্টর, এনসিডিসি):
“অ্যান্টিভেনমের সংকট নেই, সমস্যা হলো রোগীরা দেরিতে চিকিৎসকের কাছে আসেন। অনেকে এখনো প্রথমে ওঝা বা বৈদ্যের কাছে যান।”