
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) দ্রুত ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জনবান্ধব পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন, ড্যাপের সমন্বিত ও স্বচ্ছ বাস্তবায়নই টেকসই নগরায়ণের পূর্বশর্ত।
রাজধানী ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী শহরে পরিণত করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনা ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন জরুরি বলে মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নে সমতাভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নগর উন্নয়ন সবার জন্য টেকসই হয়।
গতকাল (বুধবার) রাজধানীর সিরডাপে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “ড্যাপ নিয়ে জটিলতা: টেকসই নগরায়ণ প্রসঙ্গে” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব মতামত ব্যক্ত করা হয়। রাজনৈতিক নেতা, স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজনরা সংলাপে অংশ নেন।
২০২২ সালে গেজেট আকারে ড্যাপ প্রকাশ করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে সংশোধন নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে এখনও ড্যাপের কার্যকর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। বক্তারা মনে করেন, ড্যাপের সঠিক ও স্বচ্ছ বাস্তবায়ন ছাড়া ঢাকার ভবিষ্যৎ আরও সংকটময় হয়ে উঠবে।
বক্তাদের বক্তব্য>
সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন,
“ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র দেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের দরকার সর্বস্তরে নীতিবান ও সৎ নেতৃত্ব।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, “ড্যাপ বারবার বদলালে আইন আরও জটিল হয়ে যাবে। পরিকল্পনার সময় সমন্বয় থাকতে হবে। একই জায়গা থেকে সবার মত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, “ভূমিকম্প হলে ঢাকার বড় ক্ষতি হবে। ভবনের চাপেই অনেক মানুষ মারা যেতে পারে। ঢাকার উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ অত্যাবশ্যক। গ্রাম উন্নত করলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে।”
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “ঢাকার ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ভূমিকম্পের সময় চিপাগলির ভেতরে আটকিয়ে পড়লে উদ্ধার করাও কঠিন হবে।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,
“ঢাকার এক কোটি মেহনতি মানুষকে বাদ দিয়ে কেবল উচ্চবিত্তদের জন্য পরিকল্পনা করলে সমাধান হবে না। ড্যাপের কাজ হতে হবে সমতাভিত্তিক।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, দ্য ফিন্যানশিয়াল পোস্ট সম্পাদক এম এ আজিজ, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস শেকিল চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, বিডিইএফ সভাপতি সরদার আমিন, রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সিজিএস প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।