
ন্যূনতম বেতন ৩৫ হাজার ও ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি বাস্তবায়নের প্রস্তাব
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে তারা ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করা এবং সাংবাদিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। বক্তারা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ডিআরইউ ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন—
এম আবদুল্লাহ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।
ওবায়দুর রহমান শাহীন, সভাপতি, বিএফইউজে।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাবেক সভাপতি, ডিআরই।
একরামুল হক ভূঁইয়া (লোটন একরাম), সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ।
হারুন জামিল, নির্বাহী সম্পাদক, ঢাকা মেইল ডটকম।
রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সভাপতি, ডিআরইউ।
এছাড়া বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মসিউর রহমান খান, সহসভাপতি গাজী আনোয়ার, মানি ট্রান্সফার অ্যাপ ‘নালা’র হেড অব গ্রোথ মাহমুদুর হাসান, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দিদারুল আলম এবং সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্য>
মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ভালো কিছু সুপারিশ থাকলেও অসংগতি রয়েছে, যা সমালোচনার দাবি রাখে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ধারা অপসারণের সুপারিশ অযৌক্তিক। এটি থাকা প্রয়োজন, কারণ ধর্মীয় কারণে বহু সহিংসতা তৈরি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্পাদক ও প্রকাশকরা ইউনিয়নের পদে থাকতে পারবেন না। সাংবাদিকদের সার্টিফিকেশন থাকতে হবে, অপসাংবাদিকতা রোধে এটি জরুরি। সাংবাদিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার দায়ভার মালিকদের নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।”
অন্যান্য বক্তাদের অভিমত>
আবু সালেহ আকন: “অধিকার আদায়ে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিপ্লবের পরেও কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি, সাংবাদিকরা এখনও মবের শিকার হচ্ছেন।”
এম আবদুল্লাহ: “ডিআরইউ, প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতা প্রদান জরুরি।”
ওবায়দুর রহমান শাহীন: “কমিশনের রিপোর্টে স্বচ্ছতা নেই। তাই রিপোর্ট রিভিউ জরুরি।”
মাইনুল হাসান সোহেল: “রাজনৈতিক দলের পদধারীরা নৈতিকভাবে সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারেন না।”
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা: “গণমাধ্যম কমিশন ও সরকারের কমিটিতে ডিআরইউ প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি।”
রফিকুল ইসলাম আজাদ: “সাংবাদিকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ প্রয়োজন।”
মসিউর রহমান খান: “মিডিয়ার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সরকার সাংবাদিকদের সুবিধা নিশ্চিত করেনি।”
লোটন একরাম: “টিভি ও অনলাইনকে ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আনতে হবে। টিআরপি ও সার্কুলেশন প্রক্রিয়া অযৌক্তিক।”
হারুন জামিল: “সাংবাদিকদের সপ্তাহে দুইদিন ছুটি নিশ্চিত করা দরকার।”
গাজী আনোয়ার: “‘আদিবাসী’ বা ‘উপজাতি’ শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়, সবাই বাংলাদেশি। সাংবাদিক সুরক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।”
দিদারুল আলম: “সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেওয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে, এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।”
মূল প্রবন্ধের প্রস্তাব>
সাংবাদিকদের নিবন্ধন করে আইডি প্রদান,
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন,
ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের, ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন।