
বলিউডের প্রথমসারির অভিনেত্রীদের মধ্যে কৃতি শ্যানন একজন। নিজের চেষ্টা, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি তৈরি করেছেন নিজস্ব জায়গা। একাধিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অভিনেত্রী আশাবাদী—ইন্ডাস্ট্রিতে ধীরে ধীরে নজরে পড়ার মতো পরিবর্তন ঘটছে তার জীবনে।
যদিও বর্তমানে বলিউডে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন, ছোটবেলায় কৃতির মনে অভিনয়ের কোনো স্বপ্ন ছিল না। পড়াশোনাতেই ছিল তার ঝোঁক। প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর ঘটনাচক্রে মডেলিংয়ে পা রাখেন তিনি। সেখান থেকেই খুলে যায় বলিউডের দরজা। বিজ্ঞাপনের পর্দা থেকে ধীরে ধীরে বড়পর্দায় পা রাখেন কৃতি শ্যানন, আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক দীর্ঘ ও কঠিন পথচলা।
সিএনএন-নিউজ১৮ আয়োজিত ‘সি-শক্তি-২০২৫’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে কৃতি শ্যানন নিজের অভিজ্ঞতা খোলামেলাভাবে শেয়ার করেন। অভিনেত্রী বলেন—“চলচ্চিত্র জগতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে জেদি হতে হবে, আবেগ থাকতে হবে। শর্টকাট বলে কিছু নেই। কেউ এসে আপনাকে সুযোগ দিয়ে যাবে না। আউটসাইডার হলে লড়াইটা আরও কঠিন হয়। এখানে বিনা পয়সায় কিছুই পাওয়া যায় না—না খাবার, না কাজ।”
তিনি আরও বলেন, এই যাত্রায় অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করবে। কেউ বলবে আপনি খাটো, কেউ বলবে লম্বা, আবার কেউ বলবে পাতলা। শরীরের আকার নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ চলতেই থাকবে, কিন্তু কেউ আপনাকে বলবে না—“তুমি পারবে।” তাই নিজের প্রতি আস্থা রাখাই সবচেয়ে জরুরি।
নবীনদের উদ্দেশে তার পরামর্শ—“চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার বানাতে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। সুযোগ পেতে যদি সময় লাগে, সেটাকে ব্যর্থতা ভাববেন না। বরং এটিকে ভাবুন—নিজেকে আরও উন্নত করার সুযোগ। সঠিক সময়ে সবকিছু আপনা থেকেই ঘটতে শুরু করবে।”
২০১৪ সালে অভিনেতা টাইগার শ্রফের সঙ্গে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে কৃতির। প্রথম ছবিতেই দর্শকদের মন জয় করে নেন তিনি। সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্য পায়। তবে তার পরের পথ একেবারেই সহজ ছিল না। প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা আর ফিল্মি পরিবারের বাইরে থেকে আসার কারণে সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু ধৈর্য, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের জোরে এগিয়ে যান কৃতি।
এরপর একে একে ‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’, ‘বচ্চন পাণ্ডে’, ‘ভেড়িয়া’, ‘আদিপুরুষ’সহ নানা সফল ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এর মধ্যেই সাফল্যের বড় মাইলফলক—সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন।
বর্তমানে কৃতি শ্যাননের অভিনীত নতুন সিনেমা ‘ক্রু’ মুক্তি পেয়েছে, যেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন কারিনা কাপুর ও টাবু। দুই প্রভাবশালী অভিনেত্রীর মাঝেও কৃতির সাবলীল অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করেছে।
এ ছাড়া ‘দো পাত্তি’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। এই থ্রিলার সিনেমার মাধ্যমে কৃতি তার প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস’ ব্যানারের অধীনে প্রযোজক হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন।
বলিউডে নিজের অবস্থান পাকা করে নেওয়া কৃতি শ্যানন এখন শুধুই একজন সফল অভিনেত্রী নন, বরং একজন অনুপ্রেরণা, যিনি কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের শক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন—স্বপ্ন সত্যি হয়।