ঢাকা , রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
ইসির নির্বাচনি সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ উট: মরুভূমির জাহাজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময় বনভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন শার্শার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরীর বিরুদ্ধে জুয়া ও অনৈতিক ব্যবসার অভিযোগে তদন্তেও রহস্যজনক ছাড় নাসা গ্রুপের কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভমুখর মানববন্ধন অনাবাসী বাংলাদেশিদের নিজ দেশ থেকেই হজে যেতে হবে কলকাতায় মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশি ইলিশ, ক্রেতার ঝোঁক গুজরাট-মিয়ানমারের দিকে কটাক্ষের মুখে দীপিকা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ বিএনপি–আওয়ামী লীগের মাদারীপুরে চাঞ্চল্যকর রেনু বেগম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার সবুজ

মুসলমানের মৌলিক চার গুণ

মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ নানা ধরনের স্বভাব আছে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে চারটি স্বভাব অত্যন্ত পছন্দনীয়। কিন্তু তা খুব কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। নিম্নে সে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো—

এক. আল্লাহর ভয়:
আল্লাহর ভয় তথা ‘তাকওয়া’ একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। জনে ও নির্জনে অন্তরে সব সময় আল্লাহ তাআলার ভয় থাকা ঈমানের অন্যতম অংশ। আল্লাহর ভয়ই মানুষকে দুনিয়ার সব অন্যায়, অনাচার, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন থেকে দূরে রাখতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেই ভাবে ভয় করুন, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। সাবধান অন্য কোনো অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে, বরং এই অবস্থায় যেন আসে যে তোমরা মুসলিম।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত পক্ষে সে তো শয়তান, যে তার বন্ধুদের সম্পর্কে ভয় দেখায়। সুতরাং তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে তাদের ভয় কোরো না; বরং কেবল আমাকেই ভয় করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৫)

দুই. মধ্যপন্থা গ্রহণ:
একজন মুমিনের অন্যতম গুণ মধ্যপন্থা গ্রহণ করা। মধ্যপন্থা মানে, নিরপেক্ষতা, পরিমিতিবোধ তথা সব কিছুর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করা এবং বিশেষ কোনো দিকে ঝুঁকে না পড়া।

একে পবিত্র কোরআনে এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ উম্মত তার সব কিছুতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মুসলিমগণ!) এভাবেই আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা অন্যান্য লোক সম্পর্কে সাক্ষী হও এবং রাসুল তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৩)

কোনো ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার পরিচয় দেবে না। বাড়াবাড়ি করবে না এবং শৈথিল্যের পরিচয় দেবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, বাড়াবাড়ি কোরো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)
 
তিন. ইনসাফ করা:
মানুষের আরেকটি পছন্দনীয় অভ্যাস হলো, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি—সর্বাবস্থায় ইনসাফের মুয়ামালা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন। আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হয়ে যাও আল্লাহর (বিধানাবলি পালনের) জন্য সদা প্রস্তুত (এবং) ইনসাফের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ইনসাফ পরিত্যাগে প্ররোচিত না করে। ইনসাফ অবলম্বন করো। এ পন্থাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

চার. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা :
সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, আনন্দ ও দুঃখ সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করাও ইবাদত। মানুষ সাধারণত সচ্ছলতা ও আনন্দঘন মুহূর্তে আল্লাহর প্রশংসা করলেও অসচ্ছলতা ও কষ্টের সময় আল্লাহর প্রশংসা করে না, কিন্তু আম্বিয়ায়ে কিরাম ও আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং তার গুণমুগ্ধ প্রশংসা করে। আবার কিছু মানুষ খুশির সময় বা অতি আনন্দে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। আবার যখন চরম দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তখন কেউ কেউ আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে, আবার কেউ কেউ আল্লাহ তাআলার ওপর নাখোশ হয়। আল্লাহ তাআলাকে গাল-মন্দ করে। যার কোনোটিই ঠিক নয়। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা আম্বিয়ায়ে কিরাম যখন কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হতেন তখন প্রাণভরে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতেন, পবিত্র কোরআনে হজরত নুহ (আ.) প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর যখন তুমি এবং তোমার সঙ্গীগণ নৌযানে ঠিকঠাক হয়ে বসে যাবে, তখন বলবে, শোকর আল্লাহর, যিনি আমাদের জালিম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৮)

দাউদ (আ.) ও সোলাইমান (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল, সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে এই মহৎ গুণগুলো অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

সর্বাধিক পঠিত

ইসির নির্বাচনি সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ

মুসলমানের মৌলিক চার গুণ

আপডেট সময়: ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ নানা ধরনের স্বভাব আছে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে চারটি স্বভাব অত্যন্ত পছন্দনীয়। কিন্তু তা খুব কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। নিম্নে সে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো—

এক. আল্লাহর ভয়:
আল্লাহর ভয় তথা ‘তাকওয়া’ একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। জনে ও নির্জনে অন্তরে সব সময় আল্লাহ তাআলার ভয় থাকা ঈমানের অন্যতম অংশ। আল্লাহর ভয়ই মানুষকে দুনিয়ার সব অন্যায়, অনাচার, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন থেকে দূরে রাখতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেই ভাবে ভয় করুন, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। সাবধান অন্য কোনো অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে, বরং এই অবস্থায় যেন আসে যে তোমরা মুসলিম।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত পক্ষে সে তো শয়তান, যে তার বন্ধুদের সম্পর্কে ভয় দেখায়। সুতরাং তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে তাদের ভয় কোরো না; বরং কেবল আমাকেই ভয় করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৫)

দুই. মধ্যপন্থা গ্রহণ:
একজন মুমিনের অন্যতম গুণ মধ্যপন্থা গ্রহণ করা। মধ্যপন্থা মানে, নিরপেক্ষতা, পরিমিতিবোধ তথা সব কিছুর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করা এবং বিশেষ কোনো দিকে ঝুঁকে না পড়া।

একে পবিত্র কোরআনে এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ উম্মত তার সব কিছুতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মুসলিমগণ!) এভাবেই আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা অন্যান্য লোক সম্পর্কে সাক্ষী হও এবং রাসুল তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৩)

কোনো ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার পরিচয় দেবে না। বাড়াবাড়ি করবে না এবং শৈথিল্যের পরিচয় দেবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, বাড়াবাড়ি কোরো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)
 
তিন. ইনসাফ করা:
মানুষের আরেকটি পছন্দনীয় অভ্যাস হলো, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি—সর্বাবস্থায় ইনসাফের মুয়ামালা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন। আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হয়ে যাও আল্লাহর (বিধানাবলি পালনের) জন্য সদা প্রস্তুত (এবং) ইনসাফের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ইনসাফ পরিত্যাগে প্ররোচিত না করে। ইনসাফ অবলম্বন করো। এ পন্থাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

চার. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা :
সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, আনন্দ ও দুঃখ সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করাও ইবাদত। মানুষ সাধারণত সচ্ছলতা ও আনন্দঘন মুহূর্তে আল্লাহর প্রশংসা করলেও অসচ্ছলতা ও কষ্টের সময় আল্লাহর প্রশংসা করে না, কিন্তু আম্বিয়ায়ে কিরাম ও আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং তার গুণমুগ্ধ প্রশংসা করে। আবার কিছু মানুষ খুশির সময় বা অতি আনন্দে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। আবার যখন চরম দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তখন কেউ কেউ আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে, আবার কেউ কেউ আল্লাহ তাআলার ওপর নাখোশ হয়। আল্লাহ তাআলাকে গাল-মন্দ করে। যার কোনোটিই ঠিক নয়। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা আম্বিয়ায়ে কিরাম যখন কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হতেন তখন প্রাণভরে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতেন, পবিত্র কোরআনে হজরত নুহ (আ.) প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর যখন তুমি এবং তোমার সঙ্গীগণ নৌযানে ঠিকঠাক হয়ে বসে যাবে, তখন বলবে, শোকর আল্লাহর, যিনি আমাদের জালিম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৮)

দাউদ (আ.) ও সোলাইমান (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল, সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে এই মহৎ গুণগুলো অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।