ঢাকা , রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন এ তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনীতে ভিডিওবার্তায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুই দিনব্যাপী এ সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। সংলাপের উদ্বোধন করেন ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান। তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ হয়নি ও আহতরা রক্ত দেয়নি। এর আগে গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সংলাপের উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। এরপর দিনব্যাপী ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন ড. জাহেদ উর রহমান। ধারণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।প্রথম পর্বে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক হুসাইন খান, লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা ভুলতে পারি না যে, আমাদের ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশু হত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সংস্কারের কাজে সব নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে।

যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করুন।

তিনি বলেন, সংস্কারের কাজটা নাগরিকদের জন্য সহজ করতে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন আমরা জানুয়ারি মাসে পেয়ে যাব। প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্প জাতির জন্য সুপারিশ করা। তবে কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই আমাকে-আপনাকে তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সব কটা কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, যার যা-ই মতামত হোক না কেন আমরা দ্রুত একটা ঐকমত্যে পৌঁছে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে চাই।

সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এজন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেমন ধরুন কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এ রকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে। ধরুন আমি তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে। যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি- এই হলো আমার যুক্তি। তরুণরা তাকে শক্তি জোগায়। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তার গভীর সখ্য তাকে এ শক্তি জোগায়। তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন কী ধরনের সুপারিশ করবে তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে এ দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এ মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ঐতিহাসিক মাত্রায় বলীয়ান করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত পাঁচ মাসে এ ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। তিনি বলেন, যত নিম্ন আয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোন, আর পুরুষই হোন, তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন বা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তা-ই বেছে নিতে পারবেন। এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এ পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার প্রদান করতে বাধ্য।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘রক্তের ঋণ ও ঐক্যের আকাক্সক্ষা’ শীর্ষক অধিবেশন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইয়েদ আবদুল্লাহ। বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, অধ্যাপক নাদিন শান্তা মুরশিদ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, আইনজীবী রোকসানা খন্দকার, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সর্বাধিক পঠিত

নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের স্যুটে বিশ্বনেতাদের সমাগম

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে

আপডেট সময়: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন এ তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনীতে ভিডিওবার্তায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুই দিনব্যাপী এ সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। সংলাপের উদ্বোধন করেন ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান। তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ হয়নি ও আহতরা রক্ত দেয়নি। এর আগে গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সংলাপের উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। এরপর দিনব্যাপী ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন ড. জাহেদ উর রহমান। ধারণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।প্রথম পর্বে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক হুসাইন খান, লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা ভুলতে পারি না যে, আমাদের ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশু হত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সংস্কারের কাজে সব নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে।

যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করুন।

তিনি বলেন, সংস্কারের কাজটা নাগরিকদের জন্য সহজ করতে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন আমরা জানুয়ারি মাসে পেয়ে যাব। প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্প জাতির জন্য সুপারিশ করা। তবে কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই আমাকে-আপনাকে তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সব কটা কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, যার যা-ই মতামত হোক না কেন আমরা দ্রুত একটা ঐকমত্যে পৌঁছে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে চাই।

সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এজন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেমন ধরুন কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এ রকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে। ধরুন আমি তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে। যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি- এই হলো আমার যুক্তি। তরুণরা তাকে শক্তি জোগায়। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তার গভীর সখ্য তাকে এ শক্তি জোগায়। তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন কী ধরনের সুপারিশ করবে তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে এ দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এ মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ঐতিহাসিক মাত্রায় বলীয়ান করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত পাঁচ মাসে এ ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। তিনি বলেন, যত নিম্ন আয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোন, আর পুরুষই হোন, তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন বা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তা-ই বেছে নিতে পারবেন। এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এ পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার প্রদান করতে বাধ্য।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘রক্তের ঋণ ও ঐক্যের আকাক্সক্ষা’ শীর্ষক অধিবেশন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইয়েদ আবদুল্লাহ। বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, অধ্যাপক নাদিন শান্তা মুরশিদ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, আইনজীবী রোকসানা খন্দকার, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।