
বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য একসময় ছিলো গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ। খাট, মোড়া, ঝুঁড়ি, চালুনি, হাতপাখা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা উপকরণে ছিল বাঁশ ও বেতের দাপট। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতা, প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতা ও সস্তা দামের কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগররা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় এ শিল্প দিয়ে হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন আর সেই দিন নেই। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কাঁচামাল (বাঁশ) অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনার অভাব তাদের পেশা ছাড়তে বাধ্য করছে।
স্থানীয় কারিগরদের মতে, আগে একটি বাঁশ ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন তা ২০০-২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহুগুণ। অন্যদিকে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের পণ্য বাজারে ভিড় জমিয়েছে সস্তা দামে। এ অবস্থায় বাঁশ-বেত শিল্পের পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় কারিগররা লোকসানের বোঝা টানছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবেও বাঁশ-বেতের পণ্যকে টিকিয়ে রাখা জরুরি। এ শিল্পকে রক্ষায় সরকারিভাবে বিশেষ প্রণোদনা, সহজ ঋণ সুবিধা, কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প একদিন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।