
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামে ঘটেছে নজিরবিহীন অমানবিক এক ঘটনা। লাশ আটকে রেখে আদায় করা হয়েছে সুদের টাকা। ঘটনাটি শুধু স্থানীয়দেরই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিন্দা-ক্ষোভের ঝড় তুলেছে।
গ্রামের নতুনপাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি হারুন (৪৫) গত শনিবার মেয়ের বাড়ি মেহেরপুরের মহাজনপুরে বেড়াতে যান। রোববার সকালে হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ নিজ গ্রামে আনা হয়। আছরের নামাজের পর দাফনের প্রস্তুতি চলছিল, তখন ঘটে চরম অমানবিক কাণ্ড।
প্রতিবেশী প্রয়াত মোহন আলীর স্ত্রী ও সুদি কারবারি হিসেবে পরিচিত মর্জিনা খাতুন দাবি করেন, হারুনের কাছ থেকে তিনি সুদের টাকা পাবেন। দাবি পূরণ না হলে লাশ দাফন করতে দেওয়া হবে না।
গ্রামবাসীর চোখের সামনে শোকাহত পরিবারকে মরদেহ পাশে রেখেই টাকার জন্য তর্কে জড়াতে হয়। মর্জিনা প্রথমে দাবি করেন ২২ হাজার টাকা। পরিবারের সদস্যরা দাফন শেষে টাকা দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি রাজি হননি। এমনকি জামানত হিসেবে একটি গরু রেখে আসার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
অবশেষে দফায় দফায় আলোচনার পর তিনি ১৫ হাজার টাকায় রাজি হন। মরদেহ খাটিয়ার ওপর ওই টাকা রেখে দেন স্বজনরা। টাকা হাতে পেয়ে মর্জিনা গ্রামবাসীর ক্ষোভ এড়াতে দ্রুত পালিয়ে যান।
হারুনের চাচাতো ভাই মতিনুর ইসলাম মানিক জানান, দেড় মাস আগে হারুন ৮ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু মর্জিনা সুদের অজুহাতে ২২ হাজার টাকা দাবি করেন। “আমরা গরু দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি মানেননি। শেষ পর্যন্ত নগদ ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে,” বলেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মর্জিনা দীর্ঘদিন ধরে সুদের কারবার চালিয়ে আসছেন। তিনি গ্রামীণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছেন। প্রতিবাদ করলে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় জড়িয়ে দেন। ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন, “মূল টাকা হারুন জীবিত থাকতেই পরিশোধ করেছিলেন। মৃত্যুর পর মরদেহ আটকে সুদের টাকা আদায় করা সমাজের জন্য ন্যাক্কারজনক, লজ্জাজনক ও অমানবিক কাজ।”
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, “এমন ঘটনার বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার পর স্থানীয়রা বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানালে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নেটিজেনরা একে মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।