
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। প্রতিদিনই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার কারণে নতুন করে রোহিঙ্গারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকটের অষ্টম বর্ষপূর্তিতে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
আগামী ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজার সাগরপাড়ের ইনানী সেনা রেস্টহাউসে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ২৫ আগস্ট যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন আশা>
গেল রমজানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসকে পাশে বসিয়ে ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আগামী রমজানে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) রোহিঙ্গারা নিজ দেশে রাখাইনে ঈদ উদযাপন করবেন। এবারও তাঁর সফরকে ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশা, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আরও জোরদার হবে। তবে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ>
সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাদের সংঘর্ষে আবারও সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। সীমান্তে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জড়ো হলেও স্থলপথে বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে অনেকেই নাফ নদ পার হয়ে ছোট নৌকা ও ভেলায় চড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। শুধু গত এক সপ্তাহেই কক্সবাজারে ২০০ জনেরও বেশি নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মূল লক্ষ্য>
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তিনটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি কক্সবাজারে, এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সবচেয়ে বড় সম্মেলন হবে, যেখানে প্রায় ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। তারপর কাতারের দোহাতেও আরেকটি সম্মেলন হবে।”
কক্সবাজারে আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। রোহিঙ্গারা সরাসরি এতে অংশ নিয়ে নিজেদের কথা বলার সুযোগ পাবেন।
রোহিঙ্গা নেতৃত্বে নতুন প্রতিনিধিত্ব>
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা ১৬ আগস্ট অনানুষ্ঠানিক ভোটের মাধ্যমে পাঁচজন নেতাকে নির্বাচিত করেন। তারা হলেন—মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ (ক্যাম্প-১৫), খিন মং (ক্যাম্প-১৩), জাহাঙ্গীর আলম (ক্যাম্প-১ ইস্ট), মোহাম্মদ শোয়াইফ (ক্যাম্প-১ ওয়েস্ট), সাজেদা বেগম (ক্যাম্প-১৫), এই নেতারা ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
নির্বাচিত নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো অধিকার, মর্যাদা এবং সমতার সঙ্গে নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করা। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই নতুন যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি আমাদের আস্থা আছে।”