
গাজীপুর মহানগরীতে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। একই দিনে আরেক সাংবাদিককেও মারধর ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ঘটনা দুটি স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত>
নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানিতেও চাকরি করতেন এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে শহীদ রওশন সড়কের একটি দোকানে ঢুকে পড়েন তুহিন। তখন ছয়-সাত জন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে দোকানের ভেতর ঢুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় এলাকাটি ছিল শ্রমিকে পরিপূর্ণ। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখে কেউ এগিয়ে আসেননি।
ঘটনার পেছনের কারণ>
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল চাঁদাবাজির প্রতিবেদন করার জেরে তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ডিসি (ক্রাইম) রবিউল হাসান জানান, ঘটনাটি চাঁদাবাজির নয়, বরং হানিট্র্যাপ থেকে সূত্রপাত। চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারী ও বাদশা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মধ্যে বিবাদের সময় কয়েকজন সশস্ত্র যুবক ওই নারীর পক্ষ নিয়ে বাদশাকে মারধর করছিল। এ সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। ভিডিও ধারণের বিষয়টি বুঝতে পেরে দুর্বৃত্তরা তুহিনকে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, যে নারী ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তার নাম গোলাপী। তিনি একজন কলগার্ল। হানিট্র্যাপের মাধ্যমে মানুষকে ফাঁদে ফেলে লুটপাট করা ছিল তার চক্রের কাজ।
গ্রেপ্তার ও তদন্ত>
তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, “ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।”
সাংবাদিক মহলের প্রতিবাদ>
সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ সামসুল হক রিপনসহ স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা। তারা অবিলম্বে খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুহিন>
তুহিনের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি নিয়মিত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার জনদুর্ভোগ নিয়ে স্ট্যাটাস ও ভিডিও দিতেন। হত্যার কিছুক্ষণ আগেও তিনি ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’ শিরোনামে এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেন। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো পোস্ট বা ভিডিও তার ওয়ালে দেখা যায়নি।
👉 পাঠকের উদ্দেশ্যে:
এই বর্বর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার ও সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
📌 আপডেটের জন্য চোখ রাখুন [bdkhabor.com]-এ।