
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙি পাইকান এলাকায় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে শিশুদের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে একটি অবৈধ বালুর পয়েন্ট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিশু দুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন—মারুফ মিয়া (৬), পিতা জাকিরুল ইসলাম এবং আব্দুর রহমান (৭), পিতা আব্দুর রশিদ। তারা দুজনেই নগরবন্দ বড়াইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ থাকায় সকালেই দুই বন্ধু খেলতে বের হয়। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেনি। আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাননি। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এলাকার একটি বালুর পয়েন্টে খোঁজ করতে গিয়ে প্রথমে মারুফের মরদেহ উদ্ধার করেন এক স্থানীয় ব্যক্তি।
প্রত্যক্ষদর্শী আখতারুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘আমি ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি কার্যক্রম দেখতে গিয়েছিলাম। আমার সন্দেহ হয় বালুর পয়েন্টে কিছু থাকতে পারে। গর্তে নামতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী আজহারুলের ভাগিনা মনু মিয়া আমাকে বাধা দেন এবং গালিগালাজ করেন। পরে আমি জোর করে গর্তে নামলে এক শিশুর হাত আমার হাতে লাগে। মরদেহটি তুলতেই দেখি এটি মারুফের। শিশুটির গলায় রশি বাঁধা ও একটি বোতল ছিল, এবং তার বুকের সব হাড় ভেঙে গিয়েছিল।’
পরে গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আরও এক শিশুর (আব্দুর রহমান) মরদেহ উদ্ধার করে।
শিশু মারুফের বাবা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে আমার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা নিজেরাও ওই বালুর পয়েন্টে খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আজহারের লোকজন আমাদের বাধা দেয়। পরের দিন সেখান থেকেই আমার ছেলের মরদেহ পাওয়া গেল। আমি আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাই।’
মারুফের মা রাশেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হামার ছওয়াক ওমরা মারি ফেলাইছে। হামরা তো কারও ক্ষতি করি নাই, হামার ছওয়াক কেন মারিল? হামরা বিচার চাই, আর কিছু চাই না।’
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, ‘বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ৯৯৯ থেকে একটি কল আসে যে দুটি শিশু ঘাঘট নদীতে পড়ে গেছে। আমরা রংপুর ডুবুরি দলকে অবহিত করি এবং নিজেরাও আশপাশে তল্লাশি শুরু করি। পরে স্থানীয় একজন ব্যক্তি প্রথম মরদেহ উদ্ধার করেন এবং আমাদের ডুবুরি দল দ্বিতীয় মরদেহ উদ্ধার করে।’
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘শিশু দুটির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই মরদেহ দুটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।