
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ি কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। রাতে বিদ্যালয়ে জুয়ার বোর্ড বসানো, নারী এনে অনৈতিক ব্যবসা করা, চুরি ও স্বেচ্ছাচারিতার মতো কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, কামরুজ্জামানের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এমনকি তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করলেও টাকার বিনিময়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা বানু। তদন্তে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং অভিযুক্ত নিজেই তা স্বীকার করেন। কিন্তু শাস্তির পরিবর্তে কেবল ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে পুনরায় তাকে দপ্তরীর দায়িত্বে বহাল রাখা হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা দপ্তরীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
গ্রামের কয়েকজন অভিভাবক জানান, কামরুজ্জামান টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী মাতব্বরদের ম্যানেজ করে এবং তাদের তদবিরেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তাকে চাকরিতে বহাল রাখেন।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবক বলেন— “এমন জঘন্য অপরাধ করার পরও কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় চাকরি করা মানে আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ উদাহরণ।”
অভিযুক্ত কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান— “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য। আমি ওই কাজে জড়িত ছিলাম এবং ক্ষমা চেয়েছি। এলাকাবাসী ও কর্মকর্তারা আমাকে ক্ষমা করেছেন।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার বলেন, “সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছেও সে অপরাধ স্বীকার করেছে। তবে এলাকাবাসীর অনুরোধে তাকে এবারের মতো ক্ষমা করা হয়েছে।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা বানু বলেন, “তার বিরুদ্ধে আংশিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি সাধারণ ক্ষমার সুপারিশ করেছিল। তবে নতুন অভিযোগ উঠায় পুনরায় তদন্ত করা হবে।”
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান জানান, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলেন, বিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা যায় না। তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।