টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ প্রায় এক বছর ধরে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেও দেশ-বিদেশে ছদ্মবেশে তৎপর রয়েছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশঙ্কা, তারা গোপনে একত্র হয়ে সহিংসতা বা হামলার পরিকল্পনা করতে পারে। এ কারণে সারা দেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিশেষ শাখার সতর্কবার্তা>
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) আশঙ্কা করছে, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। এ সময় সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, বিশৃঙ্খলা কিংবা ভাঙচুরের পরিকল্পনাও থাকতে পারে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এই প্রেক্ষাপটে সোমবার (২৮ জুলাই) দেশের বিভিন্ন পুলিশের ইউনিটে একটি বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে এসবি। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ডিএমপি কমিশনার, সিটি এসবি, বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম ও খুলনার স্পেশাল পুলিশ সুপারসহ দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।

বর্ষপূর্তি ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা>
চিঠিতে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
এসব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—

“এই সময়ে বিতর্কিত ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বা উসকানি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা হতে পারে।”

পুলিশকে দেওয়া নির্দেশনা>
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের ওপর নজরদারি, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার, সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম তীব্র করা।

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ সন্দেহভাজন সব যানবাহনে তল্লাশি, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরে নজরদারি বৃদ্ধি, মোবাইল পেট্রল ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল ও সাইবার পেট্রলিং জোরদার।

‘ভার্চুয়াল স্কোয়াড’ নিয়ে উদ্বেগ>
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের কিছু যুব ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা মাঠে না থাকলেও অনলাইনে ‘ভার্চুয়াল স্কোয়াড’ গড়ে তুলেছে। তারা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল চালিয়ে সামাজিক অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি>
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেল, “আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যারা দেশে-বিদেশে বসে পরিস্থিতি অশান্ত করার পরিকল্পনায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”