করোনাকালে চিকিৎসা ব্যবস্থা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই আইসিইউ, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানেলা, বেড, অক্সিজেন ও কুমিল্লার মার্কেটে নেই এমন ইনজেকশন সংগ্রহ করার জন্য স্বজন, নিকটজন ও চেনা – অচেনা শুভানুধ্যায়ীরা প্রায়ই ফোন করেন। এদের বেশির ভাগেরই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হলে জমি বিক্রি করতে হবে অথবা বিদেশ থেকে উপার্জনক্ষম পরিবারের সদস্যদের টাকার দিকে চেয়ে থাকতে হবে। তাঁরা মেহনতি মানুষ। তাঁদের শস্য চাষ, মাছ চাষ, গরু, মুরগি, ছাগল, দুধ, ডিম দিয়ে আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ হয়। তাঁরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের জন্য খাবার যোগান দিচ্ছেন। এই করোনাকালে সেইসব কর্মবীর মানুষদের আমরা কতটুকু সেবা দিতে পারছি। যে কৃষক, শ্রমিক, করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালের করিডোরে, অ্যাম্বুলেন্সে, হাসপাতালের মেঝেতে ছটফট করছে, তাঁকে আমরা শয্যা দিতে পারছি কি? সংকটাপন্ন রোগীর পাশে থাকতে পারছি কি? ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতার পরও প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ শয্যা, চিকিৎসা উপকরণ, লোকবল, সরঞ্জামাদির অভাব রয়েছে। এরপরেও আমার বড় ভাই, সহপাঠী বন্ধু চিকিৎসকদের সাড়া, সুপরামর্শ অসহায় ও পরিবারের নিকটজনের পাশে দাঁড়াতে সহায়তা করছে। আমি সেইসব দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের জানাই উষ্ণ ভালোবাসা। কিউবা সমাজতন্ত্রের দেশ। সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। তাঁরা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সবসময় চিন্তিত। রোগীদের ভাল করার জন্য অসম্ভব চেষ্টা করেন। বাংলাদেশও চাইলে তা করতে পারে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় না করে ৫০০ শয্যার স্পেশালাইজড হাসপাতাল করা হোক। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হোক। এদের বেতন কাঠামো প্রয়োজনে আলাদা করা হোক। এটি করা হলে রাজধানীসহ বড় জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে। তবেই আমাদের আমিষ, ভিটামিন ও ক্যালরি যোগানদাতাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে। করোনা শনাক্তের পর হাসপাতাল করার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল তৈরির লম্বা সময় আমরা পেয়েছিলাম। সেটি কাজে লাগালে অন্তত আরও কিছু মানুষকে আমরা আরও কিছুদিন দুনিয়াতে দেখতে পেতাম। এখনও যদি জেলা শহরের স্টেডিয়ামে টিনসেড করে অক্সিজেন লাইন চালু করে দেই তাহলে আইসিইউ, শয্যার জন্য চোখের জল ফেলতে হবে না। আর এমনটি আশা করা নিশ্চয়ই অন্যায় নয়।
0 ভিউ