হাসানুজ্জামান সুমন,বিশেষ-প্রতিনিধি: মাগুরা জেলার মহম্মদপুর আমিনুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ জিএম শওকত বিপ্লব রেজা বিকোর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।এসব অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবি তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্থানীয়রা। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শ্রী বীরেন শিকদার এর একান্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচয় দিতেন অধ্যক্ষ যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো।
নিজের পছন্দের শিক্ষক, তার মুখপাত্র পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃসিরাজুলইসলাম, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গৌতম বিশ্বাস, অধ্যক্ষের সহধর্মিণী প্রভাষক সালমা বিনতে মাহবুবসহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। তিনি শিক্ষক -কর্মচারীদের উপর দমন- পীড়ন চালাতেন।৫আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর এই অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে সবাই সরব হন।বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়ে তাঁরা বলেন, স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এই অধ্যক্ষ।কলেজ প্রতিষ্ঠাতার আশ্বাসে ৫আগস্ট এরপরও তিনি কলেজে আসলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রছাত্রীরা অধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়ে দেন, পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতার সমঝোতায় অধ্যক্ষ কলেজে না আসার শর্তে ছাত্ররা রুম খুলে দেন।
পলাতক আসামি অধ্যক্ষ এবং অফিস ক্লার্ক পিকিং গুহ কলেজে না এসেও কিভাবে দীর্ঘদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এবং বেতন উত্তোলন করেছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি সাবেক এমপি শ্রী বীরেন শিকদার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে পাতানো নিয়োগবোর্ডের মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা গোপন ঘুষের মাধ্যমে ২০১৮ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে জিএম শওকত বিপ্লব রেজাকে নিয়োগ দেন।উল্লেখ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে ১৫বছরের অভিজ্ঞতা লাগে কিন্তু যে নিয়োগ সার্কুলারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তার১৫বছরের অভিজ্ঞতা ছিলনা।অর্থাৎ তারআবেদন করার যোগ্যতাই ছিলনা। আর তখন থেকেই শুরু হয় কলেজের অর্ধঃপতন ও ব্যাপকআর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ, নানা অর্থনৈতিক অনিয়মের মহোৎসব।
তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কলেজ ফান্ডের অর্থ দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত দামি মোবাইল ফোন, অধ্যক্ষের রুমের সংস্কার এবং সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাজত্ব শুরু করেন।সরকারি অর্থছাড়াও বাড়ি ভাড়ার নামে কলেজের ইন্টার এবং অনার্স দুই ফান্ড থেকে নিয়মিতভাবে বেতন নেন, যেটা নিয়ম বহির্ভূত। বিশ্বস্ত পিয়ন সিরাজকে ক্লার্কের দায়িত্ব দিয়ে ইন্টার ও ডিগ্রী শাখার টাকা এবং আরেক বিশ্বস্ত ক্লার্ক পিকিং গুহকে দিয়ে অনার্স শাখার টাকা তোলা হয়। যে টাকার অধিকাংশ অধ্যক্ষের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।অফিস কলেজ প্রশংসাপত্র বাবদ ২০০টাকা, সার্টিফিকেট বাবদ ২০০টাকা, এডমিটকার্ড বিতরণ ১০০টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের থেকেআদায়করেন, যা কলেজের আয়ের হিসাবের বাইরে থাকে।২০২০সালে অটোপাশ ছাত্র-ছাত্রীদের বোর্ড যে টাকা ফেরত দেয়,তা থেকে জনপ্রতি২০০টাকা প্রশংসা বাবদ কেটে রাখে যা কলেজ ফান্ডে জমা হয়নি।
সাবেক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের যত্নে গড়া বড়বড় গাছ কেটে ১০০সেফটি কাঠ অধ্যক্ষ বাড়িতে নিয়ে যান,যার কিছু কাঠ এখনও সাইন্স বিল্ডিং এর দুটো ক্লাসরুমে ক্লাস অফ করে তালাবদ্ধ করে রেখে দিয়েছেন।কলেজের দোকান ভাড়া, পুরাতন হোস্টেল বিক্রি,পুকুর খননের ১৫০ট্রাক মাটি বিক্রি, পুকুর লিজ, চাষের জমি লিজের টাকা কলেজ ফান্ডে জমা হয়নি।শিক্ষা সফরের বেঁচে যাওয়া টাকা তিনি শিক্ষা সফর কমিটির সভাপতির কাছ থেকে চাপ দিয়ে আদায় করে আত্মসাৎ করেন।
অনার্স শিক্ষকরা বলেন, অনার্স শাখার এক ম্যাডামের দুই বছরের বেতন ক্লার্ক পিকিং এবং অধ্যক্ষ স্বাক্ষর দিয়ে মোট ২,৭০,০০০ টাকা তুলে নেন।করোনা কালীন সময় অনার্স শিক্ষকদের বেতন বাবদ চেকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৭০/৮০হাজার করে ১২ মাসে মোট ৯/১০লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়,যা শিক্ষকদের দেওয়া হয়নি ফলে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হন। উপজেলা প্রশাসনকে দুই তরফা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও ইউএনও রামানন্দ পাল ও পলাশ মন্ডল কোন পদক্ষেপ নেননি।বিভিন্ন শিক্ষাপ্রকল্প এবং উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দের টাকা উল্লেখযোগ্য কাজ না করে নাম মাত্র কমিটির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫০/৬০হাজার টাকার মাধ্যমে যোগদান করিয়াছেন। ১৪লক্ষ করে মোট৫৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলেজে ৪জন পিয়ন নিয়োগ দেন,যে টাকা অধ্যক্ষ ও সভাপতি ভাগাভাগি করে নেন।এছাড়াও গভর্নিং বডির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার ও তার ভাই বিমল শিকদারকে দিয়ে বিভিন্ন ভৌতিক বিলের অনুমোদন নেন এবং চেকের মাধ্যমে টাকা তুলেন।তারা আরও বলেন, কলেজের চারটা ব্যাংক একাউন্টে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা থাকার কথা থাকলেও ব্যাংকে তেমন কোন টাকা নেই। গভর্নিংবডির সদস্যদের সংবর্ধনা ও উপহার প্রদান ওইচ্ছামতন খরচ করে।অধ্যক্ষ যুবলীগের সভাপতি ও প্রেসক্লাবের সভাপতি হওযায়, কলেজ প্রাঙ্গনে কলেজের অর্থ দিয়ে মাঝেমাঝে দলীয় প্রোগ্রাম করতেন এবং গভর্নিং বডির সভাপতি, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, ও সাংবাদিকদের ভুড়িভোজ করাতেন, বেঁচে থাকা খাবার শিক্ষক কর্মচারীদের খাওয়াতেন।অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের প্রাপ্য অর্থ প্রদানে গড়িমসি। কর্মচারীদের দিয়ে তার ব্যক্তিগত বাজার- ঘাটসহ অন্যান্য কাজ করাতেন।
শিক্ষক - কর্মচারী, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, স্থানীয়রা ও কলেজ ছাত্রদলের সেক্রেটারি হিমুর ভাষ্যমতে, অধ্যক্ষ ৬ বছরে কলেজের প্রত্যেকটি সেক্টরে নানাবিধ আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক খেকে দেড় কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন।গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি, গাড়ি, খামারসহ অনেক কিছু।আর তার অনিয়ম দুর্নীতির কম্পিউটার পেপার্স তৈরিতে সহযোগিতা কলেজের অফিস সহকারী কম্পিউটার ম্যান মোঃ শাহাদাত হোসেন। নিয়ম অনুযায়ী গভর্নিংবডির সভা প্রতিষ্ঠানে হওয়ার কথা থাকলে ও ৫আগস্টের পরও সকল সভা করেছেন অধ্যক্ষ ও স্বৈরাচার দোসর ইউএনও, সভাপতি পলাশ মন্ডলের বাসায় ও অফিসে।সেখানেই ১৭লাখ টাকার দুর্নীতি, বিনা নোটিশে তার ইন্ডিয়া ভ্রমণ, অফিসের ক্লার্ক সেলিমের একবছর অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বেতন পাসসহ নানাবিদ দুর্নীতি বৈধ করার মিটিং চলমান অবস্থায় ইউএনও ও পলাতক অধ্যক্ষ জনরোষে পড়েন,পরে বিএনপি নেতা কলেজের গভর্নিংবডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান কাবুলের ছেলে তানজির রহমান সোহাগ মোটরসাইকেল যোগে তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।
এ প্রসঙ্গে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান কাবুল বলেন:-আমি প্রতিষ্ঠাতা হলেও বিগত সরকারের আমলে আমার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। অপমানিত বোধ করায় আমি নিজে থেকে দূরে সরে যাই। আপনাদের অভিযোগগুলো যা বললেন ওইগুলো ওপেন সিক্রেট আমাকে আবার নতুন করে বলতে হবেনা। নানান আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি সবার মুখেমুখে যা আমার মুখ থেকে নতুন করে শুনার প্রয়োজন নাই।এলাকার সবাই জানে আমিও অনেক অভিযোগ শুনেছি।অধ্যক্ষ অনেকের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।গাছ, পুরোনো হোস্টেলসহ নানান আর্থিক অনিয়ম এর সাথে সে যুক্তছিল।সর্বশেষ সে যখন জনরোষে পড়ে আমি আমার ছেলেকে দিয়ে তাকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেই যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
এ প্রসঙ্গে,মুহাম্মদপুর ইউএনও (চলতিদায়িত্বরত) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি এ দায়িত্বে নতুন এসেছি আমার তেমন কিছু জানা নেই।তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মার্ডার মামলার আসামী অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকোর সাথে সরাসরি ও মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Web: bdkhabor.com. call : +8801823218888. Email: infobdkhabar@gmail.com
www.facebook.com/bdkmultimedia ★ www.facebook.com/bdkhabor24 ★ www.youtube.com/@bdkhabortv