মাতৃভাষা: মা ও মাটির কথা - বিডি খবর ডটকম
ঢাকা, বাংলাদেশ | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনামঃ

প্রচ্ছদ ইসলাম ও জীবন ধর্ম মাতৃভাষা: মা ও মাটির কথা

মাতৃভাষা: মা ও মাটির কথা

bd

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,- ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর জাতির মাতৃভাষাতেই প্রেরণ করেছি; যাতে তিনি আল্লাহপাকের বাণী সহজেই তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন’ (১৪ : ৪)।

আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের বাণীর মাধ্যমে মাতৃভাষার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক অবহিত হওয়া যায়।পৃথিবীর সব জনপদে তাদের নিজ নিজ ভাষা রয়েছে; যা তাদের মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা, স্বপ্নের ভাষা এবং প্রাত্যহিক মনের অব্যক্ত কথা প্রকাশের প্রিয় ভাষা। মমতাময়ী মায়ের কাছ থেকে প্রথমে যে ভাষা সন্তান শিখে সে ভাষাকে বলা হয় মাতৃভাষা । বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ছয় সহস্রাধিক ভাষার মধ্যে এক এক জনপদের লোকেরা তাদের সেই প্রিয় মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহর বাণী- ‘আমার নিদর্শনগুলোর মাঝে রয়েছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি এবং ভাষা ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য; জ্ঞানীদের জন্য এতে সুনিশ্চিত অনেক নিদর্শন রয়েছে (৩০ :২২)।’

পৃথিবীর অপরাপর সব জিনিসের মতো মাতৃভাষার স্রষ্টাও স্বয়ং আল্লাহ। তিনি বলেন- ‘তিনিই মানব সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে মনের ভাব-বর্ণনা (ভাষা) প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন (৫৫ :৩-৪)।’
পৃথিবীর নানা জাতির বসবাস এবং তাদের মনোভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষাও রয়েছে। সেই মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মধ্য এশিয়ার অঞ্চলগুলো আর ভারতের উত্তর প্রদেশসহ বিশ্বের কিছু জাতিগোষ্ঠীর। কিন্তু বাঙালি জাতি কেবল আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলার মানুষকে জীবনও দিতে হয়েছে। ১৩৫৯ বঙ্গাব্দের ৮ ফাল্গুন মোতাবেক ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির ইতিহাসে রচিত হয়েছে অমর এক শোকগাথা; যেখানে শাহাদতের সুধা পান করতে হয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেককেই। বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মায়ের ভাষাকে মুক্ত করেছে। যা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যকে আরও গভীরে নিয়ে গেছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের উচিত, বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চা করা। বাংলাকে সব বিকৃতি থেকে রক্ষা করা।
মহান ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক ধারণা থেকে আমরা বলতে পারি, ১৯৫২ সালের বাংলাভাষার এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভাষা বাংলার অবাধ ব্যবহার ও তার সার্বিক উৎকর্ষ বিধান এবং সর্বস্তরে চর্চার অধিকার আদায় করা। অপর উদ্দেশ্যটি ছিল মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে সরকারি-বেসরকারী,সব অফিস,আদালতসহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানে এর যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং জাতীয় স্বাতন্ত্র্য-স্বকীয়তা বজায় রাখা ও সারাবিশ্বে এ ভাষার পরিচিতি আরও উন্নত পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া। আর সে জন্যই আমাদের ভাষা আন্দোলনের মূল স্লোগানই ছিল- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’ ভাষা আন্দোলনের আরেকটি মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জাতি হিসেবে বাঙালির সব গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার। কেননা, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মুখের ভাষার পরিবর্তে সংখ্যালঘিষ্ঠ কোনো জাতির ভাষা এখানে চাপিয়ে দেওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না; বরং তা সভ্যতা ও মূল্যবোধের চরম পরিপন্থী। এ রকম একটি অগণতান্ত্রিক, অন্যায় ও মানবাধিকার পরিপন্থী বিষয়ের তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে গিয়েই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল; যা পরবর্তীকালে বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সব বৈষম্য দূরীকরণে পর্যায়ক্রমে এক ঐতিহাসিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে অমর একুশের অকুতোভয় বীর শহীদদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে।
মহানবী (সা.) ছিলেন আরবের সবচেয়ে সুন্দর ও শুদ্ধভাষী। তিনি কোনোদিন একটি অশুদ্ধ বা বিকৃত শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেননি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শহীদদের অবদান এবং মহানবীর (সা.) মাতৃভাষা প্রীতির অজস্র নজির সামনে রেখে এ বিষয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ইতিহাসের আলোকে আমরা দেখতে পাই, আরবের অধিবাসীদের নীতিবিধান, জীবনবোধ ও সামগ্রিক আচার-পদ্ধতি সহজে বোঝার জন্যই আরবি ভাষাতে কোরআন নাজিল হয়েছিল। আর তা আল্লাহ পাকের বাণীতেও পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়- ‘আমি একে আরবি ভাষায় কোরআনরূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো (১২ :২)।’ আল্লাহর এ নির্দেশনার আলোকে আমাদেরও উচিত সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলার যথার্থ প্রচলন এবং বাংলাভাষার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আনয়ন। বাংলাভাষার কবি, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্ট সবার উচিত তাঁদের রচনায় আমাদের শিশু-কিশোরসহ অল্পশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মানুষের সহজে বোধগম্য হয় এমন শব্দাবলির ব্যবহার করা। ভিন্ন ভাষায় রচিত গ্রন্থাদি সহজবোধ্য ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে উপস্থাপন বাঞ্ছনীয়।

ধর্মীয়, নৈতিক ও শিল্প-সাহিত্য সম্বন্ধীয় সব রচনা মাতৃভাষায় ভাষান্তর হওয়া প্রয়োজন; যাতে ইসলামকে বুঝতে সহজ হয়, নৈতিক জ্ঞানের মানুষরাও গুণান্বিত হবে এবং বিদেশি রচনাবলির স্বাদ বাংলায় আস্বাদন করতে সক্ষম হবে। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত মা মাটি ও মাতৃভাষাকে মন দিয়ে ভালোবাসা এবং বাংলা ভাষাকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা।

লেখক: গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির , ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক,সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেসক্লাব, কুমিল্লা।

শেয়ার করুনঃ
0 ভিউ

ইউপি সদস্যের উপর হামলার জের, ব্যবসায়ীর বাড়ীতে ভাংচুর ও লুটপাট

মার্কিন প্রতিনিধি দলের মুরাদনগরের কৃষি কার্যক্রম পরিদর্শন

মুরাদনগরে পরীক্ষায় নকল দিতে গিয়ে ৩জন আটক, মোবাইলকোর্টে ২বছরের সাজা

মুরাদনগরে পরীক্ষায় নকল দিতে গিয়ে ৩জন আটক, মোবাইলকোর্টে ২বছরের সাজা

মুরাদনগরে ‘রোহিঙ্গা’ যুবকের জন্ম নিবন্ধন! পাসপোর্ট করতে গিয়ে ধরা

শ্রীমন্তপুর এম এ ছাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান

প্রতিপক্ষের হামলার প্রতিবাদে আহত ফ্রান্স প্রবাসীর সংবাদ সম্মেলন

নাগেশ্বরীতে টঙ্গী ইসতেমার রিজার্ভ বাসে ছদ্মবেশে মাদক পরিবহনের চেষ্টায় আটক-১

শ্রীমঙ্গলে কোয়াব কাপ টি-১৬ ক্রিকেট-২৪ টুর্নামেন্ট’র উদ্বোধন

বুড়িচং উপজেলা আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

নাগেশ্বরীতে ২০ বোতল ফেন্সিডিল ও ০২ বোতল ইস্কাফসহ মাদক কারবারি আমিনুল গ্রেফতার

বিয়ের প্রলোভনে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেফতার

চেলসির সঙ্গে ড্র, ফাইনালের পথ কঠিন হলো রিয়ালের

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে কোহলিরা

আরও ২/৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে

খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

পপ সম্রাটের বিরদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাখান

ইউনেসকোর প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার জিতলেন মারিয়া রেসা

দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুই সহোদরের মৃত্যু, আহত ৩

রাজধানীতে অভিযানে গ্রেফতার ৩০

ওবায়দুল কাদের আপনি রেহাই পাবেন না: কাদের মির্জা


উপরে