কুমিল্লার মুরাদনগরের ইসলামপুর নিবাসী কবি আব্দুর রশিদ মাস্টারকে আমরা ভুলিনি, কখনো বলবো না ।কবি রত্নকর উপাধিপ্রাপ্ত একবির প্রতি রয়েছে আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা। শুধুমাত্র গল্প কবিতা লিখে আর ছাত্র পড়িয়ে তিনি জীবন অতিবাহিত করেন নি তিনি নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন মসজিদ, স্কুল এবং রাস্তাঘাট।
কবি আব্দুর রশিদের জন্ম ১৯২০ সালে। তিনি পাঠশালায় লেখাপড়া শেষে গাঙ্গেরকুট মাইনর ইস্কুলে এবং পরবর্তীতে ফতেপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করে এন্ট্রান্স পাস করেন। তার প্রিয় শিক্ষাগুরু ছিল যোগেশ গুপ্ত এবং প্রমথ বর্ধন। লেখাপড়া শেষে তিনি মাত্র 12 টাকা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন।
জনাব আব্দুর রশিদ গাঙ্গেরকুট এমএন স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা করেন। সে সময় তিনি ইচ্ছে করলেই ভালো মানের সরকারি চাকরি নিতে পারতেন। কিন্তু গ্রামের লোকদের জ্ঞানের আলো বিতরণের জন্য তিনি গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাননি। ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি গাঙ্গেরকুট ১৯৫৮ সাল থেকে১৯৬১ সাল পর্যন্ত আন্দিকুট হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি শিক্ষক জীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার প্রতি ও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। তার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য লাভ করে।
বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি দীর্ঘ ১৯ বছর একটি ওষুধের ফার্মেসি পরিচালনা করেন। তখন তিনি গরীব ও অসহায় রোগীদের কম মূল্যে ঔষধ দিয়েছেন। কবি ও মাস্টার আব্দুর রশিদ পাকিস্তান শাসনামলে রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনিয়১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অবস্থান করেন এবং রাষ্ট্রভাষার দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন । তার চোখের সামনেই ভাষাসৈনিক রফিক ও সালাম শাহাদাত বরণ করেন ।এই ঘটনা তিনি কখনও ভুলতে পারেননি। এ সময় তিনি কবিতা লিখতেন । ভাষা শহীদদের নিয়ে তিনি বহু কবিতা লিখেছেন। ১৯৫২ সালে তিনি বিয়ে করেন বরিশাল রোকিয়া বেগম কে। বিয়ের ৩ দিনের মাথায় তিনি শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে শুনলেন, বরিশাল টাউন হল ময়দানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক আসবেন ।তিনি নির্দিষ্ট সময়ে সে জনসভায় হাজির হলেন। তিনি জানান সেদিন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তাঁর বক্তব্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনকে ভালো লোক হিসাবে আখ্যায়িত করে তার প্রশংসা করেন ।এতে জনসাধারণ অত্যন্ত রাগান্বিত হয় ।কবি আব্দুর রশিদ একটি চিরকুট লিখে মঞ্চে পাঠান। অনুমতি সাপেক্ষে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সেদিন জোরালো বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সাহেব তার পূর্ববর্তী বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ একে “স্লিপ্ট অফ ট্যাং” বলে উল্লেখ করেন।
তিনি নিজ উদ্যোগে সমাজ সেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন।১৯৪৫ সালে “ইসলামপুর যুব সংঘ “নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনের সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে ইসলামপুর- সিদ্ধিরগঞ্জ, আন্দিকোট -সিদ্ধিরগঞ্জ রাস্তা নির্মিত হয়। এছাড়া এলাকাবাসীর সাহায্য -সহযোগিতায় ঈদগাহ, পোস্ট অফিস ,কবরস্থান ও মসজিদ নির্মাণ করেন। এছাড়া এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ( ১৯৪২) গাঙ্গেরকোট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮) প্রতিষ্ঠা করেন, আন্দিকোট উচ্চ বিদ্যালয় ( ১৯৪৯) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি “ব্যথার বাঁশি” ( ১৯৪৮) ও ” ভাঙ্গা প্রাণ” নামে দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া কাব্যসঞ্চয়ন নামে দুটি পান্ডুলিপি রয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ কবিতা রয়েছে। তিনি কবি কাজী নজরুলের উপর গবেষণা মূলক নিবন্ধ লিখে প্রশংসিত হয়েছেন। কবি ও সাহিত্যিক জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন । বগুড়া সাহিত্য পরিষদ তাকে ‘কাব্য সুধাকর” যশোর থেকে “কবি রত্নকর “আগরতলা থেকে সালে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি দেয়া হয়। তিনি কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন।
0 ভিউ