জিলহজ্ব মাসের চাদ উঠার আগেই আমাদের দেশের চায়ের দোকানগুলোতে কোরবানি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কে কত বড় গরু কুরবানী দিচ্ছে ? ধন-সম্পদ থাকার পরও দিচ্ছে না , অথবা সামর্থ্য না থাকলেও কে কে কিস্তিতে টাকা এনে বড় গরু কুরবানী করছে ? এ হচ্ছে আলোচনার বিষয়।
এতে বড় বড় পশু কুরবানী করা লোকদের মনে রিয়া বা আত্মতুষ্টির আসতে পারে । কেউ কেউ আবার বড় গরু কিনার পর মিডিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন । গরুর গলায় ঘন্টা বাজিয়ে , রঙ্গিন মালা পরিয়ে , রিনিঝিনি সুরে বাড়ি নিয়ে যান । গরুর সাথে সেলফি উঠিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন । যদিও এতে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয় না তারপরও এজাতীয় কাজ ছোট শিরক বা শিরক এ আজগার এর অন্তর্ভুক্ত । কোন মুসলমান জেনে শুনে এ কাজ করতে পারেন না।
কুরবানীর মত যাকাত ও একটি আর্থিক ইবাদত । এটি মুসলমানদের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় । কেননা পবিত্র কুরআনে সালাতের পর পর যাকাতের কথা গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে । আমরা অনেকেই সম্পদের হিসাব সঠিকভাবে রাখিনা । এমনকি যাকাতের ব্যাপারে অনেকেই উদাসীন। যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য থাকলেও কুরবানীর ব্যাপারে কারো মধ্যে শিথিলতা লক্ষ করা যায় না। এছাড়া অনেকেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কুরবানীর বাজেট বৃদ্ধি করেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বলেন, গত বছর বাজারের সেরা গরু টি আমি কিনেছিলাম, এবছর অন্য কেউ কিনে নিলে সমাজে আমার প্রেস্টিজ থাকবে না । তার ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর নৈকট্য লাভের পরিবর্তে মানুষের নিকট মর্যাদা লাভ করেন। শুধুমাত্র ধনবান ব্যক্তি লোকদেখানো কুরবানীর মধ্যে পড়েন না গরীব রিয়াকারী ব্যক্তিরা এ দোষের অধিকারী হতে পারেন । হাতে নগদ টাকা পয়সা নেই , কোন কারণে তিনি ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন , কুরবানী না দিলেও পাপ হবে না। অথচ তাদেরকেও সুদে টাকায় কোরবানি করতে দেখা যায় তারা ভাবেন ঘরে ছেলে মেয়ে আছে ঈদে মেয়ে ও মেয়ে জামাইর আসবেন তখন যদি শুনেন এবছর কুরবানী দেয়া হয়নি তখন প্রেস্টিজ থাকবে না তাই কষ্ট করে হলেও কুরবানি দেয়ার চেষ্টা করেন।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ধর্মীয় গবেষক।
0 ভিউ