ঈদ উপলক্ষে মুরাদনগরের কামারদের ব্যস্ততা : সারা বছরই অবসর কাটে - বিডি খবর ডটকম
ঢাকা, বাংলাদেশ | শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৮ আশ্বিন ১৪৩০

শিরোনামঃ

প্রচ্ছদ সারাদেশ চট্টগ্রাম কুমিল্লা মুরাদনগর ঈদ উপলক্ষে মুরাদনগরের কামারদের ব্যস্ততা : সারা বছরই অবসর কাটে

ঈদ উপলক্ষে মুরাদনগরের কামারদের ব্যস্ততা : সারা বছরই অবসর কাটে

bd
কুমিল্লার মুরাদনগরে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে আর কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এ উপকরণ তৈরি ও শান বা লবন-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ঢু-মারছেন। আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
কামার একটি প্রাচীন পেশা যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায় গ্রামাঞ্চলে কামার পেশায় জড়িত। আগেকার দিনে অধিকাংশ ঘরবাড়ি এবং কৃষি-যন্ত্রপাতি কামারদের দ্বারা তৈরি হতো। তাদের প্রস্ত্ততকৃত গৃহ এবং কৃষি সামগ্রীর  মধ্যে দা, কোদাল, কুড়াল, শাবল, বটি, পেরেক, ছুরি, লাঙলের ফলা, কাস্তে, নিড়ানি, বেদে কাটি, খুন্তি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায় গ্রামাঞ্চলে কামার পেশায় জড়িত।
গ্রামের নির্দিষ্ট পাড়ায় ছিল কামার পাড়া। লোহার কারিগরদের লোহা দিয়ে নানা দ্রব্যসামগ্রী বানানো, লোহা পেটানোর কর্কশ শব্দ, পোড়া গন্ধ, পোড়া লোহা থেকে বিচ্ছুরিত আগুনের স্ফুলিঙ্গই কামার পাড়ার সাধারণ দৃশ্যচ্ছবি। এখন শুধু গ্রামেই নয় শহরেও ছড়িয়ে পড়েছেন তারা।
দূর অতীতে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গভূমিতে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায়ের মধ্যে লোহার কারিগর তথা কর্মকার শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। প্রচলিত লোককাহিনী মতে কোনো এক শূদ্র মহিলার সঙ্গে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কর্মকার বা কামারের জন্ম হয়। কামারদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা বসুন্দরী, রানা, গঙ্গালিরি এবং বাহাল অথবা খোটা। এরা একই শ্রেণিভুক্ত না হলে বৈবাহিক সস্পর্ক স্থাপন করে না। এইচ.এইচ রিসলে-র মতে, পূর্ববাংলায় কামারদের তিনটি সামাজিক শ্রেণি হচ্ছে বুষ্ণপতি, ঢাকাই এবং পশ্চিমা। বুষ্ণপতিরা আবার তিন ভাগে বিভক্ত, যথা নালদিপতি, চৌদ্দসমাজ ও পঞ্চসমাজ। এদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বৈবাহিক সস্পর্ক স্থাপনে কোনো বাধা নেই। বাংলাদেশের অধিকাংশ কামারই বৈষ্ণব কিন্তু অল্পসংখ্যক কামার শাক্ত ধর্মাম্বলম্বী। তাদের প্রিয় দেবতা বিশ্বকর্মা, যাকে ভাদ্র মাসের শেষদিনে  মিষ্টান্ন, চিড়া, গুড়, ফুলফল, চন্দনের রস বা বাটা, গঙ্গাজল, কাপড় ও রৌপ্যালঙ্কার দিয়ে পূজা-অর্চনা করা হয়। একই সময় কামারদের ব্যবহূত যন্ত্রপাতিসমূহকেও উপাসনা করা হয়। মহিলারা অনন্তা, সাবিত্রী, ষষ্ঠী, পঞ্চমী ইত্যাদি ব্রত পালন ও নিস্তারিণী এবং মঙ্গলচন্ডীর কাহিনী পরিবেশন করে। মহিলা ও শিশুরা মিষ্টান্ন, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি দিয়ে পূজা-অর্চনা করে। গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শূদ্র সস্প্রদায়ের কামাররা অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে। সমাজে তারা অস্পৃশ্য নয়। গ্রামাঞ্চলে তারা তাদের কার্যক্রম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করছে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে গ্রামের মেলায় অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে এ পেশায় অনেক মুসলমানকেও দেখা যায়। অনেক কামার তাদের পছন্দ অনুযায়ী গ্রাম এবং শহর উভয় অঞ্চলে অন্যান্য পেশাও গ্রহণ করে থাকে।প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানায় কার্মকাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ভিতরে চলছে কাজ। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখে মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজের ব্যস্ততা।
ঈদুল-আজহা সামনে রেখে উপজেলার কামার দোকানগুলিতে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মকাররা। এ উপজেলায় কোম্পানীগঞ্জ, রামচন্দ্রপুর,পাঁচকিত্তা,বাঙ্গরা বাজার সহ প্রায় সবগুলো বাজারে কামারের দোকান রয়েছে। ফতেহাবাদ, পোনরা ও বারেরা বাজারসহ ইউনিয়নগুলির বড় প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত। এ পেশার মানুষ সারা বছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।
কামাররা জানায়, দা আকৃতি ও লোহাভেদে ২০০ থেকে ৫০০টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং পুরানো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবন-পানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত করোনার প্রভাবে এবং লকডাউনের বিধি নিষেধে অনিশ্চিত বাজার নিয়ে শংকার মধ্য দিয়েই কাজ করছে বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী জাত পেশার কারিগর কর্মকাররা।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের পরেশ কর্মকার  জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন-রাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।
আন্দিকুট গ্রামের মনিরঞ্জন কর্মকার দৈনিক  বলেন, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে। তবে করোনার প্রভাবে এখনো পর্যন্ত সেই রকম কাজের চাপ না থাকলেও আশা করছি চাহিদা আরো বাড়বে। আগে এই সময়টা থেকেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হতো। কারিগররা আরো জানায়, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
শেয়ার করুনঃ
0 ভিউ

মুরাদনগরে হাত ভাঙ্গা শিশু শিক্ষার্থীর পাশে ‘হাসির ফেরিওয়ালা’

কৃতিত্বপূর্ণ কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ বিশেষ পুরস্কার পেল মুরাদনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল 

কুমিল্লা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কে সিএনজি ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

মুরাদনগরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম: ৮ দিন পর মৃত্যু

কুমিল্লায় ইসলামী ফ্রন্টের মতবিনিময় সভায়

কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু শনাক্ত ৫৯জন

আজ থেকে হিজরী নববর্ষ শুরু

শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নোমান আহমেদ সিদ্দিকী

মুরাদনগরে ছফিউল্লাহ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও গোলাম জিলানীকে সম্পাদক করে সদর ইউনিয়ন আ. লীগের কমিটি গঠন

মুরাদনগরে যুব ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের উদ্যােগে বৃক্ষরোপন

বিয়ের প্রলোভনে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেফতার

চেলসির সঙ্গে ড্র, ফাইনালের পথ কঠিন হলো রিয়ালের

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে কোহলিরা

খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

আরও ২/৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে

পপ সম্রাটের বিরদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাখান

কানাডা অভিবাসনের টুকিটাকি: কানাডার পিআর স্ট্যাটাস কি স্থায়ী?

ইউনেসকোর প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার জিতলেন মারিয়া রেসা

দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুই সহোদরের মৃত্যু, আহত ৩

রাজধানীতে অভিযানে গ্রেফতার ৩০


উপরে